একদিন মদিনায় সন্ধ্যা নেমে এলো। মদিনা আলো-বাতাসে
ছড়িয়ে পড়লো বেলালি সুর। মিনারের
আল্লাহু ধ্বনি
খেজুরের পাতা ছিড়ে
পৌঁছে গেল ওলিতে গলিতে। সাহাবিরা
মসজিদে। সেজদা-তাসবিহ- তেলাওয়াতে মগ্ন। মদিনার নবী হজরত মুহাম্মদও মসজিদে। দয়াল নবীর দরবারে এসে পৌঁছল একদল
মুসাফির। সন্ধ্যার এর অবেলায় নবীজি মুসাফিরদের মেহমানদারির আয়োজন করলেন। সাহাবিদের বললেন, যাও মেহমানদের যথাসাধ্য আপ্যায়ন করো, ওরা আমাদের অতিথি। রাসুল নিজেও একজন অতিথি ঘরে নিয়ে গেলেন। আরবের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পাপের গন্ধ।
পথিক মানেই
ভয়-আতঙ্ক। লোটেরা-ডাকাত। সব ডর-ভয় উপেক্ষা করে দয়াল নবী অচেনা অজানা মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। রাসুল সা. এর ঘরে
সেই অতিথি ছিলো ইহুদি।
জেনে শোনেও নবীজি তাকে নিজ হাতে খাওয়ালেন। ইহুদি বলে কথা। মুহাম্মদকে
বিপদে
ফেলাতে না পারলে আবার
কেমন ইহুদি।
সে মনে মনে ইচ্ছা করলো, ‘আজ আমি ঘরের সব খাবার একাই খাব’। ভাবনা ও কাজের মিল পাওয়া গেল। একেবারে পেট
পুরে খেলো।
নবীজি নিজেই তার বিছানা
করলেন। ইহুদি মেহমান গা এলিয়ে দিল ঘুমাবের বিছানায়। গভীর রাত। নীরব নিস্তদ্ধ। ঘুম ভেঙে গেল
অতিথির। একেতো মরু পথের দীর্ঘ ক্লান্তি, আবার খেয়েছেও গলা ভরে। এবার বাতরুমের প্রচন্ড চাপ। কিন্তু এতো রাতে, অজানা অচেনা জায়গায় কোথায় যাবে সে? এমন সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বিছানা নষ্ট করে ফেলেছে আগন্তুক। এবার ভয় পেয়ে গেল ইহুদি, মুহাম্মদ সা. মদিনার সম্রাট। তার ঘরে এমন অপকর্ম? লোকটি ভয়ে পালিয়ে গেলো। ছুটে পালাচ্ছে সে যেদিকে দুচোখ যায়। যদি মুহাম্মদের লোকেরা তাকে ধরে ফেলে – এমন ভয়ে ছুটছে প্রাণপণে। এমনি সময় তার মনে হলো সে তলোয়ার ফেলে এসেছে মুহাম্মদরে ঘরে।
সে সময় তলোয়ার ছাড়া ভ্রমণ কল্পনাই করা যায় না। কি
করবে আগন্তুক?
সিদ্ধান্ত নিল আবার মদিনায় যাবে, তলোয়ার ছাড়া একমুহুর্তও অসম্ভব। চুপিচুপি
মুহাম্মদ
সা.-এর ঘরে এসে ঢুকেছে
ইহুদি। মনে বড় ভয়! কি জানি কি হয়! আরে! একি কি দেখছে সে? ইহুদি মেহমান নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে
না। রাসুল সা.
নিজের হাতের লোকটির
নষ্ট করে যাওয়া বিছানা ধুয়ে দিচ্ছেন। চেহারায় রাগের চিহ্ন নেই।
রাসুল সা. তাকে দেখে ছুটে এসেছেন তার কাছে। তাকে বলতে লাগলেন, ও ভাই! আমার ভুল হয়ে গেছে, রাতে তোমার খোঁজ নিতে পারিনি, আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট করেছো। আমাকে মাফ করে দাও!
ইহুদি ভাবতেও পারছে না এমনটা। মানুষ বুঝি এমন হয়।
তাও রক্ত মাংসে গড়া মানুষ! মানবিক মানুষের উপমা। ইহুদি মেহমান এবার মাথা নুইয়ে দিলেন
নবীজির কাছে।
সমকণ্ঠে উচ্চারন করলেন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইলাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ। ওগো আল্লাহর নবী-আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি; আল্লাহ এক-আপনি আল্লাহর রাসুল।
সূত্র
: বায়হাকি
No comments:
Post a Comment