Like Box


Wednesday, May 13, 2020

সিপাহসালার

একজন মানুষ কত আর সহ্য করতে পারেন? কতই বা ধৈর্য ধরতে পারেন একজন মানুষ?

তবু তিনি ধৈর্য ধরেন। হাসিমুখেই সব সহ্য করেন। কারন তিনি এক অন্য মানুষ! অনন্য এক মননের অধিকারী তিনি। মুখে তার ক্ষমার বাণী ঝরে পড়ে সারাক্ষণ। আকাশের মতোই উচু আর বিশাল তার মন। তার দৃষ্টিসীমার নিচে অনুগ্রহ আর অনুশোচনার এক অনন্য আয়োজন! যেখানে ঘোর শত্রæও সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে পরম আনন্দে। এমনি এক মানুষ তিনি। বনু কোরায়যা থেকে সবেমাত্র ফিরে এসেছেন। ক্লান্ত দেহ স্বভাবতই বিশ্রাম খোঁজে। তিনিও চাচ্ছিলেন একটু বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু তাদের কন্ঠে যে ক্লান্তিহীন এবং আরো সতেজ হয়ে আবেদনটা ঝরে পড়ছে!

তারা কীভাবে মেনে নেবেন এটা? ভালোবাসার প্রিয় মানুষটিকে নর্দমার কীটটা বার বার আঘাত করে যাবে আর তারা চেয়ে চেয়ে দেখে যাবে-তা কি করে সম্ভব!
না! এ মেনে নেয়া যায় না! একটা উচিত শিক্ষা এবার দিতেই হবে! চরম শিক্ষা! হ্যা চরম শিক্ষা! তারা নবীর প্রিয় মানুষ! নবীর কাছের মানুষ! প্রিয় নবীর সাহাবী তারা!

একজন, দুজন-অনেকগুলো মানুষের জোরালো একটা আবেদন এসে কড়া নাড়ে প্রিয় নবীজির দরবারে। এরা সবাই-ই মদিনার সম্ভ্রান্ত খাযরাজ গোত্রের সদস্য। তাদের যথাযথ দাবী রাসূলের চোখে-মুখে আনন্দের দূতি ছড়িয়ে দেয়। সফরের ক্লান্তি ভুলে সিদ্ধান্তের অলি-গলিতে চোখ বোলান রাসূলে আরাবী। হ্যঁ, তিনিও ভাবলেনÑ এবার একটা উচিত শিক্ষা দিতে হয়। আল্লাহর এ চরম দুশমনকে তার ন্যয্য হিস্যাটা দেয়ার এখনই সময়।

আবু রাফে। ইসলাম আর মুসলমানদের চরম দুশমন আবু রাফে। রাসূল সা. কে কষ্ট দেয়ার অন্যতম এক পাপিষ্ট এই আবু রাফে। হুজুর সা. খাযরাজের আগত দলটির সাথে পরামর্শ শেষে স্বভাব সূলভ আদেশ দিলেন কাজটা করতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। সাবধান! নিরপরাধ মহিলা আর শিশু বাচ্চাদের ওপর দৃষ্টি রেখো! ইনসাফের মহান বানীটি উচ্চারিত হলো অতি গুরুত্বের সাথেই।
তারপর তিনি নিজের হাতেই বনুসালামার উৎসর্গীত দলটাকে সাজিয়ে দিলেন। কর্মপন্থা বুঝিয়ে দিলেন যোগ্য অভিবাবকের মতোই। আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের কাঁধে দায়ীত্ব বুঝিয়ে দিয়ে একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন রাসূলে আরাবী সা.।
পশ্চিমাকাশে সূর্য সবেমাত্র তার ক্লান্ত দেহ ছড়িয়ে বসেছে। দিগন্ত বিস্তৃত রক্তিমাভা নতুন এক বার্তা জানান দিয়ে যাচ্ছে অনবরত। ঈমানদীপ্ত নবীপ্রেমের কাফেলাটি শংকাহীন চিত্তে সব সংশয়ের বাঁধা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে খায়বরের পথে। মরুর চিরচেনা বালুকাময় পথ মাড়িয়ে কাফেলা এখন নবীর চিরদুশমন আবু রাফের বাড়ির পথে।

নিজের সবটুকু দায়ীত্ব শেষ করে সূর্য তখন তার নিজ ঠিকানায়। সূর্যের দাপুটে প্রভাবের কারনে যে অন্ধকারেরা এতক্ষণ চুপসে ছিলো চার পাশে এখন তাদেরই দ্বীপ্ত পদচারনা। মরুভূমির বিরক্তির উত্তপ্ত বালুকনাকে হারিয়ে দিয়ে আকাশে তখন প্রশান্তির বাতাস। দিনের কর্মব্যস্ততাকে বিদায় জানিয়ে নীড়ে ফেরা পাখির মতোই ফিরতে শুরু করেছে যে যার ঘরে।

একটু পরই; সবার ফেরা নিশ্চিত হলেই কেল্লার প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যাবে। সবার মধ্যেই ফেরার এক অন্যরকম তাড়া।

তাড়াতাড়ি আসো! তাড়াতাড়ি আসো! দরজা বন্ধ হয়ে এলো বলে! কেল্লার প্রধান ফটকে চাবিহাতে সতর্ক প্রহরী।

আকাশে পূর্নিমা চাঁদ। কেল্লার অদূরেই ইতিহাসের মহানায়কেরা! শুধু সুযোগের অপেক্ষা! একটু মাত্র সুযোগ!

দলনেতা সাথিদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। যেভাবেই হোক ঢুকতে  হবে ভেতরে। আল্লাহর দুশমন আবু রাফেকে পিশে ফেলতে হবে মাটির সাথে। প্রাণের প্রিয় নবীকে কষ্টদিয়ে একটি প্রাণও জীবিত থাকতে পারে না!
সাথিদের বসিয়ে রেখে মুহূর্তেই বাতাসে মিলিয়ে গেলেন দলনেতা আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক। সময় যে খুবই কম!

চারপাশে রাতের আধিপত্ব। একে একে সবাই-ই  ঢুকে পড়েছে কেল্লার ভেতর। বাতাসে নিরবতার শব্দ ছাপিয়ে ভেসে আসছে দ্বাররক্ষীর ক্লান্তি জড়ানো কন্ঠসরÑ
আর কেউ কি আছো? এখনই দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। আছো কেউ!
মাথায় চাদর জড়িয়ে ইতস্তত পায়ে ফটকের পাশে গিয়ে বসে পড়েন সিপাহ সালার আব্দল্লাহ ইবনে আতিক। যেনো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছেন তিনি। ঠিক এমনি মুহূর্তে সেইমুহূর্তটিএলো। সিপাহ সালার আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের দিকে লক্ষ করে দ্বররক্ষীর বিরক্তিভরা কন্ঠসর।
এই যে, তাড়াতাড়ি ঢুকো বাপু! দরজা  কিন্তু বন্ধ করে দিলাম!
এই তো সুযোগ! দ্বাররক্ষী চিনতে পারেনি তাকে। খুশিতে ভেতরটা লাফিয়ে উঠে নবী প্রেমিক আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের

চারদিকে রাতের সুনসান নিরবতা। সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু সবার। এক এক করে কেল্লার সবকটি বাতি নিভে আসে। ওপরে; আবু রাফের ঘরে চলছে গার্নে আসর। নুপুরের ঝুম ঝুম ছন্দ ভেসে আসছে বাতাসে। কেল্লার প্রধান ফটকের সামনে দাড়িয়ে চারপাশটা একবার দেখে নিলেন বীর মুজাহিদ আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক। নাহ! কেউ জেগে নেই। তারপরও অপেক্ষা। নিশ্চিন্তির সীমানা ছুঁতে চান তিনি। সুযোগ  বার বার আসে না।

একসময় নুপূরের ঝুমঝুমানি ও বন্ধ হয়ে আসে। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে দাড়িয়ে নিশ্চিন্তির একটা হাসি হাসলেন আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক। সংকোচহীন পায়ে এক এক করে অনেকগুলো দরজা পেরিয়ে গেলেন তিনি। আর একটি মাত্র দরজা পেরুলেই গন্তব্য। কোমরে গুঁজে রাখা তরবারিটা আরো একবার দেখে নিলেন ভালোকরে।

একেবারে শেষ দরজাটাও পেরিয়ে গেলেন। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিঃশব্দের মাঝে ভয়হীন দৃষ্টিমেলে তাকিয়ে আছেন সিপাহ সালার আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক। একহাত দূরের কিছুও অস্পষ্ট। চোখে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। সময় খুবই কম। নিঃশব্দ পায়ে আরো ভেতরে ঢুকে গেলেন তিনি।
কিন্তু কোথায় আবু রাফে?

ধ্যাৎ বিরক্তিকর অন্ধকারের ওপর কিছুটা রাগই হলেন সতর্ক সিপাহ সালার।
অপ্রত্যাশিতভাবে প্রিয় মানুষের আগমনের মতোই বুদ্ধিটা উঁকি দিলো হঠাৎ করেই। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে একটা আনন্দের হাসি হাসলেন সাহসী বীর আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক। দরোজার কাছাকাছি এগিয়ে এসে ক্ষীনস্বরে ডেকে উঠলেন
আবু রাফে! ও আবু রাফে!

সতর্ক প্রহরীর মতোই আরো তৎপর হয়ে উঠলেন সিপাহসালার। হ্যা, ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন। ঐ তো ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর নড়ে উঠেছে দেহটা। পরমুহূর্তে কন্ঠস্বরটাও উঠে এলো। ঘুমজড়ানো সেই ভয়ার্ত কন্ঠস্বর কে? কে ডাকে? এ্যা?
আর কালবিলম্ব কিংবা সময়ক্ষেপন নয়, মুহূর্তেই নবী প্রেমিক আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের ঝকঝকে তরবারিটি হেসে উঠে। কিন্তু নাহ! ব্যার্থ প্রয়াস! জমাটবাঁধা অন্ধকার বাঁধা হয়ে দাড়ায় বিজয়ের পথে। সিপাহ সালার আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের ব্যর্থ আঘাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় ইহুদী আবু রাফের। ব্যাপারটা তার কাছে দুঃস্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের ব্যর্থ আঘাতে খাটের ভেঙ্গে যাওয়া জায়গাটায় হাত দিয়ে কতক্ষণ একা একাই বিড়বিড় কললেন আবু রাফেÑকোনো দুঃস্বপ্ন নয়  তো! তাই বা হয় কি করে? এই যে তরবারির আঘাত!
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সিপাহসালার ততক্ষনে দরোজার ওপাশে। দাতে দাত চেপে শুধুই সুযোগের অপেক্ষা।

ওদিকে সকাল হয়ে এলো বলে! আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক আর দেরি করতে চাইলেন না। অন্ধকারে গা মিলিয়ে আবারো ঢুকে পড়লেন নবীদুশমন আবু রাফের ঘরে। এবার একেবারে অন্যরুপে সিপাহ সালাহ। নিজের কন্ঠস্বরে নিজেই চমকে উঠলেন বুঝি। কিছুটা শংকা আর অনিশ্চয়তাÑ কাজ  হবে তো! পায়ে পায়ে আরো কিছুটা এগিয়ে গেলেন। নাহ! বেটা কিছুই বুঝতে পারেনি। সময় তো এখনই!

প্রভুভক্ত চাকরের মতোই কর্তব্যতা ঝরে পড়ে  আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের কন্ঠে-
আবু রাফে! কিসের আওয়াজ পেলাম যেনো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
আব্দুল্লাহ ইবনে আতিকের চমৎকার ফাঁদে মুহূর্তেই কাবু হয়ে পড়ে আবু রাফে। এতক্ষন ভয়ে সে চুসে ছিলো। কেল্লার নিরাপত্তারক্ষীর আগমন ভেবে দেহে যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসে উঠে জানোয়ার কোথাকার! থাকিস কোথায়! তাড়াতাড়ি খুঁজে দেখ! কে যেনো তরবারী দিয়ে আঘাত করেছে আমায়!
শিকার নাগালের মধ্যে পেয়ে এবার আর ভুল করলেন না সিপাহসালার আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক। মুষ্টিবদ্ধ তলোয়ার বিদুৎবেগে ছুটে চলে আবু রাফের হৃদপিন্ডটা লক্ষ্য করে। পৃথিবীর সমস্ত ঘৃনা এক করে আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক আঘাত করলেন নবীদুশমন আবু রাফের চোখে-মুখে; পুরো শরীরে।

এবার যেনো তিনি সস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন -যা শয়তান নরকে গিয়ে মর!
আজ বিজয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায় সাধ্য কার? নবী প্রেমে সদা উৎসর্গ যে প্রান ইতিহাসে তাইতো মহান! কেল্লার সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার ভেদ করে নবীপ্রেমের যে মশালটি আলো ছড়িয়েছিলো ইতিহাসে তা আজো বীপরেমের যে মশালটি আলো ছড়িয়েছিলো ইতিহাসে তা আজো অম্লান!

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.

Facebook


Blog Archive

Videos

3/Food/recent-videos

Technology

3/Technology/small-col-left

Sports

3/Sports/small-col-right

Fashion

3/Fashion/big-col-right

FOOD MATTERS

TRAVEL GUIDES

Text Widget


Sample Text

17/05/2020

Tags

Photos

Photos
Islamic

Categories

Advertisement


Labels

Featured recent অন্তর মরে যাওয়ার দশ কারণ আগুনও যাকে পুড়েনি আতর বিক্রেতার মেয়ের ঘটনা আল্লাহ বিনিময়ে তার চেয়েও উৎকৃষ্টতর জিনিস দান করেন আল্লাহর একশ’ ভাগের একভাগ রহমত জগৎবাসীর জন্য ইসলামের অতুলনীয় আদর্শ ঈমানদার মানুষ ফেরেশতার চেয়ে উত্তম উমর (রা.)-এর শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষনীয় ঘটনা এক আলেম আর তার স্ত্রী এক মাদরাসার ছাত্র এক যুবকের গল্প একজন মাতাল ব্যক্তির বেহেশতে যাওয়ার গল্প একটি চিঠি ও নদীর গল্প খলিফা উমর (রা:)-এর মোমবাতি নেভানোর শিক্ষণীয় কাহিনী খলিফা হারুনুর রশীদ ও এক নাস্তিকের গল্প গুহা থেকে মুক্তি ফেল তিন যুবক চাওয়া ও পাওয়া অনুযায়ী প্রতিদান জীবনের সবচেয়ে সুখের মূহুর্ত তারপর মিষ্টি খেতে নিষেধ করেছেন! নবী (স.) যেভাবে দান করতেন নবীজি আগে মিষ্টি খাওয়া ছেড়েছেন নবীজির ঘরে মেহমানের খেদমত বাগদাদ শহরের ইমামের সুন্দরী স্ত্রী এবং মাস্তান যুবক মহানবী ও জিব্রাইল (আঃ) এর-কথোপকথন মহানবীকে (সা:) অপরিচিত ব্যক্তির কয়েকটি প্রশ্ন মায়ের শেষ ইচ্ছা মুহাম্মদের (সা.) যে কথায় কাঁপলো আবু জাহেল যা আছে ততটুকুতে সন্তুস্ট থাকতে হবে যে কারণে রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) রুটি চোরের পরিনতি শয়তানদের দরবারে কথোপকথন শিক্ষনীয় ঘটনা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর শ্রমজীবি সাহাবিদের গল্প সব কিছুই কোন একটি কারণেই ঘটে সিপাহসালার হযরত উমার (রাঃ) এর শাসন আমলের একটি গল্প

Pages

Back To Top